Saturday, May 21, 2016

এক বাবার পাগলামি ও ছেলের ভালবাসা






শুভ্র

বাবার একমাত্র ছেলে।
অবাক হচ্ছেন? বাবা মায়ের না বলে শুধু বাবার বললাম কেন?
আসলে শুভ্রর মা নেই। জন্মের কয়েক বছর পরেই মারা গেছে। তখন থেকেই সে বাবার সাথেই থাকে। তার বাবা তাকে খুবই ভালো বাসে। কোনদিন মায়ের অভাব বুজতে দেয় নি। তার বাবা ছিলো একেবারে বন্ধুর মতো। সে সব কথা বাবার সাথে সেয়ার করতো।
.
ফারদিন সাহেব (শুভ্রর বাবা) একটা কলেজের প্রিন্সিপ্যাল। আর শুভ্র একটা মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানির মেন্যাজার।
.
প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে শুভ্র তার বাবাকে নিয়ে যায়।
.
এমনি একদিন শুভ্র তার বাবার জন্য কলেজের গেটের সামনে দাড়িয়ে।
হঠাৎ একটা মেয়ে কলেজ থেকে বেরুলো।
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুভ্র।
.
একটা কালো শাড়ি পরেছে মেয়েটা। মুখে হিজাব। শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। চোখে কাজল দিয়েছে। একেবারে অপরুপ লাগছে মেয়েটাকে। কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছে না। শুভ্র তাকিয়ে আছে।
.
→খুব সুন্দর! না??
.
→ হ্যা খুব সুন্দর... (বলতে বলতে পিছনে তাকালো শুভ্র) .... বাবা তুমি! কখন এলে। (শুভ্র)
.
→ যখন সুন্দর জিনিস দর্শন করা হচ্ছিলো। তখন....(বাবা)
.
→ বাবা! তুমিও না। চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে.....
.
→ হ্যা চল( বলেই গাড়িতে উঠলেন ফারদিন সাহেব)
গাড়িতে উঠেই ফারদিন সাহেব আবার শুরু করলেন.....
→ তোর চয়েসের তারিফ করতে হয়। আর তোদের দু'জন কে মানাবেও ভালো।
.
→ উফ! আবার শুরু করলে তুমি। আচ্ছা তার আগে বলো মেয়েটা তোমার কলেজ থেকে বেরুলেন কেন??
.
→ আরে ও তো আমাদের কলেজে নতুন কেমিস্ট্রি টিচার।
.
→ তাই নাকি! তা নাম টা কি??
.
→ কেন বলবো??
.
→ বাবা বলনা। প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লি........
.
→ আচ্ছা বলছি বলছি...... ওর নাম তারিন।
.
.
তার পরের দিন আবার শুভ্র দাড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর তারিন বের হল। শুভ্র আজও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আজ মেয়ে টা বেগুনি কালারের ড্রেস পরেছে। ধীরে ধীরে তারিন দৃষ্টি রেখার বাইরে চলে যাচ্ছে। শুভ্র তখনো তাকিয়ে আছে।
.
→ এই যে শুভ্র সাহেব। শুধু এইভাবে তাকিয়ে থাকলে হবে।
.
→ তো কি করব?
.
→ কি করব মানে। পেছন পেছন যা। অন্তত বাড়ি টা দেখে আয়।
অতপর শুভ্র ছুটতে লাগলো। মেয়েটা যেদিকে গেছে সেদিকে। কিন্তু কিছুদুর যেতেই একটা চার রাস্তার মোড় পেলো। কিন্তু তারিনকে কথাও দেখতে পেলো না। তাই হতাশ হয়ে ফিরে এলো।
.
→ কিরে পেলি? (বাবা)
.
→ দুর! কোনদিকে যে গেলো!
.
→ আচ্ছা সমস্যা নাই। কাল আবার যাবি। এখন চল। অনেক ক্ষিদে পেয়েছে।
.
→ হ্যা! চলো।
.
.
পরের দিন আবার শুভ্র দাড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর তারিন বের হলো। পেছনে তার বাবাও। তাই শুভ্র বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলো না। কারন বন্ধুর মতো হলেও বাবা তো!
.
→ চল! চল!(বাবা)
.
→ চল মানে! কথাও যাবা নাকি??(শুভ্র)
.
→ হ্যা! বাড়ি টা দেখে আসতে হবে না।
.
→ তুমিও যাবা নাকি?
.
→ হ্যাঁ!.. কোন সমস্যা??
.
→ না কোন সমস্যা নাই!
.
→ তাহলে দাড়িয়ে আছিস কেন চল।
.
অতপর তারা তারিনের পিছু পিছু গিয়ে তারিনেরর বাসা টা চিনে আসলো।
তারপর প্রতিদিন শুভ্র তারিনের পিছু নেয়। ব্যাপার টা তারিন বুজতে পারে। এই ছেলেটাকে দেখলে কেন যানি খুব বিরক্ত লাগে। তাই শুভ্র দেখলেই একটা রাগি লুক নেয়। কেন যানি এই ছেলেটাকে তার বিরক্ত লাগে। প্রতিদিন কলেজের সামনে বখাটে ছেলেদের মতো দাড়িয়ে থাকে।
.
কেটে যায় আরও কয়েকটা দিন।
.
→ কি রে! বলেছিস?
.
→ কি?
.
→ তুই যে ওকে ভালোবাসিস?
.
→ না।
.
→ সেকিরে এখনো বলিশনি!
কালকেই গিয়ে বলবি!
পরের দিন সাহস করে শুভ্র তারিনের সাথে কথা বলতে যায়। কারন বাবা আজকেই বলতে বলেছে।
.
→ এই যে! শুনছেন?
.
তারিন শুভ্র কে দেখেই রাগি একটা লুক নিয়ে ওর সামনে গেলো। আজ ছেলেটাকে কিছু একটা বলা দরকার।
.
→ বলুন?
.
→ না মানে আপনার সাথে একটু কথা ছিলো!
→ বলতে বললাম তো!
.
→ জ্বি মানে .. আ আসলে..
.
→ কি মানে মানে করছেন...
.
→ না মানে আমি আপনাকে ভালবাসি। (চোখ বন্ধ করে)
.
ঠাস!
গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে শুভ্র।
.
→ছি! আপনাকে তো দেখে ভদ্র ঘরের ছেলে মনে হয়। আচরন এরকম বখাটেদের মতো কেন। আপনার মতো জঘন্য লোকের সাথে দাড়িয়ে কথা বলতেও ঘৃনা হচ্ছে।
এই আপনার মা আপনাকে কি এইসব বলেছে। মেয়েদেরকে দেখলই ভালবাসি বলবি। আপনার বাবা মা আপনাকে ভদ্রতা শেখায় নি?...... যত্তসব।
আর কক্ষনো যেন আমার পেছনে না দেখি। ফালতু ছেলে কথাকার
.
কথা গুলো বলেই তারিন রাগে গজ গজ করতে করতে চলে গেলো।
.
এখনো গালে হাত দিয়ে নিশ্চুপ দাড়িয়ে আছে শুভ্র। চোখ দিয়ে অঝরে বৃষ্টি পড়ছে। তারিন তার ভালবাসাকে উপেক্ষা করেছে সে জন্য নয়। তার বাবা মাকে খারাপ বলেছে সে জন্য।
.
অন্ধকার রুম। রুমের মধ্যে একটি ছেলে। ছেলেটির চোখে জল। হাতে বেশ কয়েক টা ঘুমের ট্যাবলেট। ফোনেরর টর্চ জালিয়ে কি যেন লিখছে।
হ্যা এটা শুভ্রই। যে কি না কিছুক্ষন পরেই সুইসাইড করবে।
.
.
বাবা যানো! আমি না চলে যাচ্ছি। তাই বলে তুমি কিন্তু একটুও ভাববে না যে ওই মেয়েটা গ্রহন করে নি বলে চলে যাচ্ছি....
জানো ওই মেয়ে টা না তোমাকে আর আম্মুকে পচা বলেছে। কিন্তু আমি তো জানি আমার আব্বু কত্ত ভালো। আসলে আমার জন্যই এরকম হয়েছে। মেয়েটাকে অনেক বিরক্ত করেছি। তাই হয়তো...।
তুমি প্লিজ মেয়েটাকে বলিও যে i am sorry....
নিজের খেয়াল রাখবে। আর আমি চলে যাওয়া পর একদম কাদবে না কিন্তু।
I love you papa...I really love you.....
.
চিঠিটা শেষ করে শুভ্র হাতে থাকা ট্যাবলেট গুলো খুলতে লাগলো।
গুনে গুনে ৮ টা ট্যাবলেট খেয়ে নিলো।
হ্যা এইতো ঘুম আসছে। ধীরে ধীরে ঘুমের অতল সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে।
.
পরের দিন শুভ্র নিজেকে হাসপাতালের বেডে পেলো। পাশে বসে আছে তার বাবা।
চোখগুলো ফুলে রক্তবর্ণ ধারন করেছে। নিশ্চই কাল সারারাত কেঁদেছে। নিশ্চই কাল সারারাত একটুও ঘুমায়নি।
.
চোখ মেলতে দেখেই ফারদিন সাহেব জিঙ্গেস করল....
→ এখন কেমন আছিস বাবা।
.
→ এইতো একটু ভালো।
.
→ এটা কেন করতে গেছিলি। তোরা মা ছেলে কি আমাকে একটু শান্তিতে বাঁচতে দিবি না। তখন তর মা চলে গেলো আমাকে একা করে। এখন তুই চলে যেতে চাইঝিস একবারও ভাবলি না আমার কি হবে আমি কি নিয়ে বাঁচবো।
.
→ সরি বাবা।
.
.
কয়েক দিন ধরে কিছু একটা মিস করছে তারিন। বড্ড খালি খালি লাগছে।মনে হচ্ছে হঠাৎ করে কিছু একটা হারিয়ে গেছে তার জিবন থেকে।
সেদিন কলেজ শেষে তারিন সেই যায়গায় গেলো যেখানে রোজ শুভ্র দাড়িয়ে থাকতো.
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো..
.
→ কাউকে খুজছো?
.
তারিন পেছন ফিরলো। একি এতো প্রিন্সিপাল স্যার!
.
→ আরে স্যার আপনি?
.
→ হ্যাঁ! কাউকে খুজছো নাকি।
,
→হ হ হ্যাঁ... না মানে কাকে খুজবো।
.
→ শুভ্রকে মিস করছো না??
.
→ হ্যা. না মানে আপনি শুভ্রকে কিভাবে চেনেন??
.
→ আমি অর বাবা। অ তোমাকে সরি বলতে বলেছে।
জানো তারিন! অ তখন ছোট। তখন অর মা মারা যায়। তারপর থেকে আমি ওকে মানুষ করি । মায়ের ভালোবাসা কোনদিন দিতে না পরলেও যতদুর সম্ভব চেস্টা করেছি।
যেদিন ও তোমাকে প্রথম দেখেছিলো সেদিন নাকি অর মায়ের কথা মনে পড়েছিলো। তাই রোজ তোমাকে দেখার জন্য ছুটে যেত। কিন্তু তুমি অর বাবা মা কে নিয়ে যেটা সেটা মেনে নিতে পারে নি।
তাই এখন হাসপাতালে।
→ হাসপাতালে কেন??
.
→ বাদ দাও! ও হ্যা অ বলেছে আর কোনদিন তোমাকে বিরক্ত করবে না।
আচ্ছা আজ তাহলে আসি!!
.
রাস্তায় এলোমেলো হাটছে তারিন । কি করছে সে এটা। কিছু না জেনে সে ছেলেটাকে এমন কিছু বলে ফেললো। আচ্ছা ছেলেটা হাসপাতালে কেনন। সুইসাইড করতে যায় নি তে। নাহ! কিচ্ছু ভাবতে পরছেনা।
.
আজ ১ সপ্তাহ পর আবার শুভ্র তার বাবা কে নিতে এসেছে । তবে আজ সে গাড়ির মধ্যেই বসে আছে। কারন যাতে তারিন না দেখতে পায়।
.
কলেজ থেকে বের হয়েই তারিন দেখতে পেলো শুভ্র গাড়িটা পার্ক করা। কিন্তু শুভ্র কে দেখা যাচ্ছে না। তার মানে গাড়ির মধ্যে
দৌড়ে গাড়ির কাছে গেলো তারিন।
শুভ্র অবাক চোখে+ ভয়ে তাকিয়ে আছে। না জানি আবার ঝাড়ি শুরু করে।
→ এই বের হন গাড়ি থেকে। (অনেকটা রেগে)
.
শুভ্র ভয়ে ভয়ে বেরিয়ে এলো। সাথে সাথে তারিন কলার চেপে ধরে বললো.......
.
→ ওই! সুইসাইড করতে গেছিলেন কেন।
.
→ মা মা মানে.....
.
→ কি মানে মানে করছো। আর কয়েকদিন আসো নি কেন। জানো কত্ত মিস করছি তোমাকে?
→ তাহলে তুমি আমার আব্বু আম্মুকে পচা বললা কেন। তোমার সাথে কথা বলব না।
.
→ সরি ! আমি আসলে জানতাম না। এই যে কান ধরছি।
.
→ এই এই কান ধরছো কেন। সবাই দেখছে তো।
.
→ তাতে তোমার কি?
.
→ আমার অনেক কিছু! কারন আমি তোমাকে ভা.....
.
→ কি আটকে গেলে কেন?
.
→ ভালোবাসি.....(বলেই গালে হাত দিলো)
.
→ এই গালে হাত দিলে কেন?
.
→ যদি চড় মারো!
.
→ হাত সরাও বলছি!
.
শুভ্র হাত সরাতেই তারিন ওর গালে এতটা টুট টুট একে দিলো। তারপর লজ্জায় বুকে মুখ লুকালো।
.
→ বলছি এগুলা বিয়ের পর করলে হয় না?? ( বাবা)
.
→ স্যার আপনি! (লজ্জায় মাথা নিচু করে)
.
→ এই বিয়ে ক্যানসেল।( শুভ্র)
.
→ কেন? (তারিন)
.
→ তুমি বাবাকে স্যার বলছো কেন?? সরি বলো!
.
→ সরি বাবা!!

No comments:

Post a Comment